নিজের ছোট ভাই নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, আমার একজন স্বজনও উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের সমর্থন আছে কি না। আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে কিনা সেটাই সেটাই দেখার বিষয়।
উপজেলা নির্বাচন থেকে স্বজনদের সরে যাওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, স্বজন বলতে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে সন্তান ও স্ত্রীকে বুঝিয়েছেন। যা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এবং রাতের সভায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) খোলাসা করেছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রভাব বিস্তার করা যাবেনা। প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করা যাবেনা। নির্বাচনকে প্রভাবিত করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা অনুযায়ী নেতা কর্মীরা কাজ করছে।
উপজেলা নির্বাচনে অনেকেই দলের নির্দেশনা মানেনি, তাদের বিষয়ে দল কি ব্যবস্থা নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, অনেকেই এর মধ্যে প্রত্যাহার করতে শুরু করেছেন। আমাদের কয়েকজন আগেই প্রত্যাহার করেছেন। আমাদের গোলাম দস্তগীরের ছেলে প্রত্যাহার করেছেন। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আমার একজন স্বজনও উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের সমর্থন আছে কি না। আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে কি না সেটাই সেটাই দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, পার্টির কারো এর সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই, নেতৃস্থানীয় কারো এর সঙ্গে কোনো সমর্থন নেই। আমার সমর্থনের তো প্রশ্নই উঠে না। শেষ পর্যন্ত সরে যাবে না সেটাও বলা যায় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে গাইডলাইন সেটা আমি মুখে বলব একটা আর কাজে করব আরেকটা এতে আমি বিশ্বাসী নই। কোনো প্রকার স্বজনপ্রীতি আমি কোনো অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেব না।
স্বজন বলতে প্রধানমন্ত্রীর যে সংজ্ঞা সে বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার কথা হচ্ছে, ভাই হোক, স্বজন হোক আমি তাকে দাঁড় করিয়েছি কি না। আমি তার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছি কি না, আমার দল সমর্থন দিচ্ছে কি না সেটা হচ্ছে বড় কথা। আমি বা আমার দল যদি পক্ষে না থাকে তাহলে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিষয়ে জড়িত নেই।
প্রধানমন্ত্রীর বলা পরিবারের মধ্যে যেনো সব কিছু কেন্দ্রীভূত না করে এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বজনদের সব কিছু দেওয়ার জন্য যদি সব কিছু কেন্দ্রীভূত করা হয় দলের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী নেতারা যাবে কোথায়? একথা আমাদের সভাপতি বলেছেন। আমাদের সকলের বক্তব্য সেটাই।
বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় সরকার বাধা দিচ্ছে বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক। আওয়ামী লীগ করেনি। সেই মামলায় গ্রেফতার ও বন্দী হয়েছেন। আমি বলব বিএনপি নেতাদের অবহেলার জন্য, বেগম জিয়া আদালতের হাজিরা প্রলম্বিত করা, এক বছরের বিচার দশ বছরেও শেষ হয়নি এটার জন্য বিএনপির নেতারা দায়ী।
তিনি বলেন, রাজপথেও তারা মুক্তির দাবিতে দেখার মতোও বিক্ষোভ মিছিলও করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং শেখ হাসিনার উদারতার জন্য শাস্তি স্থগিত রেখে বাড়িতে থাকা ও চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করায় সহযোগিতা করেছে।
আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে কিভাবে মোকাবেলা করবে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের সুসংগঠিত হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৪ দলীয় জোটকেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে কাছে টানতে হবে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের নিজেদের সাবজেক্টিভ প্রিপারেশন এর উপর নির্ভর করে আমরা বাস্তব কঠিন পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে সক্ষম।
দেশি-বিদেশি চাপ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তিযুক্ত কতটা সেটা আমরা দেশ চালাচ্ছি, সেটা তো আমরা উপলব্ধি করি। কিভাবে আমাদের উপর চাপ দেওয়া হয় সেটা আমরা দেশ শাসন করতে গিয়ে, দেশের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এই চাপগুলো আমরা অনুভব করি। নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে হুমকি, ধমকি ছিল, নিষেধাজ্ঞার ভয় ছিল। এগুলো তো প্রকাশ্যেই দেওয়া হয়েছিল। এখানে কোনো গোপনীয়তার বিষয় ছিল বলে আমার জানা নেই। এখানে তো কোনো সিক্রেট বিষয় ছিল না। এই বিষয়ে আমাদের বক্তব্যও পরিষ্কার।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহদাত হোসেন। বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রকাশ করা চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের তালিকায় ১ নম্বর ক্রমিকে শাহদাত হোসেনের নাম রয়েছে।
আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।